ছোটকাল থেকেই আমাদের অঞ্চলে (কালুখালি -ভাটিয়াপাড়া) ট্রেন লাইন দেখে আসছি। তবে সেই লাইনের উপর দিয়ে কখনও ট্রেন চলতে দেখিনি।অনেক বছর পর এ লাইনে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।সেই ট্রেনে চড়ে বাড়ি যাচ্ছি।স্বাভাবিকভাবেই সব কিছু বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখতে দেখতে যাচ্ছি। প্রথমে যখন সিটের উপর বসলাম, পশ্চাদদেশের পতনটা বেশ জোরেশোরেই হল। সিটের গদিটা আমাকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারল না।কারন তার মধ্যে আমার ধারণা থেকেও অনেক কম ছোবড়া ছিল। বুঝলাম, এখানে কারসাজি হয়েছে। এবার আশেপাশে তাকানোর পালা।এদিকওদিক তাকিয়ে দেখি পঞ্চাশ পার করা মানুষের মাথার চুলের মত সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আয়েশ করে বসেছে। আমার মুখোমুখি সিটের ধামড়া শিশু সন্তানটি জুতাসমেত সিটের উপর বান্দর বান্দর খেলছে। বাদাম খেয়ে খোসা ট্রেনের ভিতর ফেলতে থাকা মা তার নির্বিকার। ট্রেন চলা শুরু হল।প্রচুর ধুলা উড়ছে। দাঁতের সাথে দাঁত মিশিয়ে পাটা -পুতোর মত ঘষতে যেয়ে বালির কিচকিচানিতে দারুন শিহরিত হলাম। নতুন লাইন বিধায় এত ধুলো উড়ছে। জানালার কাঁচ বহু কসরত করেও নামাতে পারলাম না। বুঝলাম, কাঁচ নামাতে হলে 'ব্রেক ফার্স্টে ডানো মাস্ট '। যাহোক, মোবাইলের স্ক্রিন মুছতে মুছতে অভিজ্ঞতা লিখতে থাকলাম। একপর্যায়ে সাদা সাদা ছোপ পড়ে যাওয়া নেভি ব্লু পোশাকের পুলিশ সাহেবটি বাদাম খেতে থাকা মায়ের টিকিট দেখতে চাইল। রেলওয়ে পুলিশের কাজ আইন শৃংখলা পরিস্থিতির দেখভাল করা।টিকিট চেক করার জন্য আলাদা লোক আছে। বুঝলাম, এই স্বেচ্ছাশ্রমের পিছনে ঘাপলা আছে। চোখ -কান আরেকটু প্রসারিত করে জানা গেল অনেকেই টিকিট না কেটে মাছের বাজার স্টাইলে পুলিশের সাথে দরদাম করছে।বুঝলাম, সরকারকে হাওয়াই মিঠা খাইয়ে এরা নিয়মিত (নাটোরের) কাঁচাগোল্লা খেয়ে যাচ্ছে। কাঁচাগোল্লার কথা ভাবতে ভাবতে এক কাদি কাঁচকলাসহ এক যুবককে ট্রেনে উঠতে দেখলাম।তিনি এক সিটে বসলেন, কষ ঝরতে থাকা কলার কাদি রাখলেন আরেক সিটে।বুঝলাম, কোন এক মহারাজার খাস তালুকে ভুল করে ঢুকে পড়েছি।তবে ভুল করি আর যাই করি, খুব সহজ পথে যোহরের আজান শুনতে শুনতে বাড়ি পৌছে গেলাম।
আজ বুঝতে পারছি এই লাইনে কেন নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আরও বুঝতে পারছি, কয়েক বছর পর এই লাইনের ট্রেন চলাচল কেন আবার বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই বলছি, শুধু সরকারের দোষ দিয়ে লাভ নাই। আগে নিজের ছিদ্রগুলোতে নিজের হাতে ঢুকানো বাঁশগুলো বের করে নিন।তারপর শুরু করা যাবে সমৃদ্ধির পথে চলা।
"আগে নিজের ছিদ্রগুলোতে নিজের হাতে ঢুকানো বাঁশগুলো বের করে নিন"- কথাটা চরম সত্য। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ট্রেনেই একই অবস্থা। পাবলিক নিজেরাই দায়ী এজন্য।
ReplyDelete