যে আসে নি : একটি শোকগাথা
(পাঁচ বছর আগে, এই দিনে)
কথা ছিল আসবি তুই সময় মত।
সময় কমছিল আর বাড়ছিল কল্পনার মেদ-
কার মত হবিরে তুই? দাদা-কাকার মত
মোটা নেকো হস না, দাদি কিংবা বাবার মত
নাক উঁচু হোক তোর।
তবে বিনয়ের নাক যেন মোটাই থাকে।
সাত বছরের বোনটি তোর বড়ই একা।
পুতুল তার ভালো লাগে না মোটেও;
ওরা ওর হাত ধরতে পারে না,
পারে না ছুঁয়ে যেতে ছোট্ট মনের অভিমান, আবেগ।
তুই কি ওর পুতুল হবি? মানব পুতুল?
ব্যাটারি ছাড়াই হাসবি খিলখিলিয়ে;
-ঘরের এমন জায়গায় লুকাবি যেন
হাজার চেষ্টাতেও খুঁজে না পায়;
তারপর সহসা ঝাঁপিয়ে পড়বি ঘাড়ে।
পিলে চমকে যাবে ওর।
আচ্ছা, কী বলে ডাকবি আমায়?
‘কাক্কু’, ‘কাকা' না ‘ছোট কাকু’ বলে?
যা বলেই ডাকিস, প্রাণ ছুঁয়ে যাবে আমার।
ঘাড়ের দখল ছেড়ে দেবে আয়েশা, আনিশা।
(তোর বোন তো ছেড়েছে আগেই।)
শক্ত হয়ে বসে থাকিস, ঘাড়ে বসেই ছিঁড়িস
গাছের নুয়ে পড়া পাতা, ছুঁয়ে দিস উঁচুতে রাখা বইগুলো সব,
কেড়ে নিস দাদার মাথার টুপি, বাবার ক্যাপ।
বড়দের থেকেও তোর হাত অ--নে—ক উপরে-
ভাবতেই হেব্বি মজা পাবি।
ছেলে যদি হস তুই, ফাটিয়ে দিবি।
আমার পরে আর ছেলে নেই এ গোষ্ঠীতে।
ঘাড়ে বসেই শাসাতে পারবি সবক’টিকে।
আর মেয়ে হলে টেক্কা দেয়া টাফ হয়ে যাবে।
ইলিনা, আনিশা আর আয়শার কিন্তু অনেক গুণ-
বোনটি তোর নামতা পারে না মোটেও।
তবে কম্পিউটারের বোতাম টেপে ঝড়ের বেগে;
বুড়ো কম্পিউটারটা হাঁপিয়ে উঠে যখন তখন।
অন্যদিকে আনিশা পাকা পাকা কথা বলে;
মায়ের সাথে স্কুলে যায়, স্কুলে খায়, ঘুমায়,
আর নানির সাথে বড় বড় ছড়া আওড়ায়;
একটা লাইনও এদিক-সেদিক হয় না।
আয়েশার কথা কী বলব আর? বলার মত
বড় হয় নি; সব কিছুতেই মুচকি হাসে।
বিধাতা যেন আমাদের প্রতি মুচকি হেসে
ওর প্রতি অট্টহাসি হেসেছে। এত সুন্দর!
রাঙাপরী হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
সবাইকে ছাপিয়ে তুই অ-নে-ক বড় হবি;
দেহে কিংবা চেহারায় নয়; হয়তো লেখাপড়াতেও নয়;
বড় হবি চেতনার শুদ্ধতায়, দেশ প্রেমের বোকা বোকা আবেগে,
আর মনুষ্যত্বের নরম দুর্বলতায়।
বড় হবি কাউকে ছোট না করে।
-এমনি করে বাড়তে থাকে কল্পনার মেদ,
আর সময় হতে থাকে শেষ।
তারপর আচমকা আসে এক অভিশপ্ত ফোন।
সময় অসীমের সাথে আঁতাত করে,
কল্পনাগুলো সময়ের আঁচলে মুখ লুকাতে ব্যর্থ হয়ে
পরিহাসের মালা হয়ে ঝুলতে থাকে আমার গলে।
ও খোকা! ও খুকি! এভাবে ফাঁকি দিলি কেন?
বিধাতার কাছে নতজানু হয়ে সময় বাড়াতে পারলি না?
দেখতে ইচ্ছে হল না প্রিয় মুখগুলো তোর?
আর আমার কবিতা- কত শখ ছিল তোকে পড়ে শোনাব,
কন্ঠে তুলে দিব সবার আগে।
আর তোর জন্ম দিনে লিখে ফেলব এক মহাকাব্য।
একি করলি খোকা/খুকি তুই?
পাঁচ মাসেই মায়ের ভিতর চিরতরে ঘুমিয়ে গেলি?
আহারে! কত কিছুর মরন ঘটালি তুই।