Wednesday, October 21, 2020

ভাষা ভাবনা

কিছু কিছু বাক্য বা শব্দগুচ্ছ ভাষার গন্ডি পেরিয়ে অন্যন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।  এরা মুখ থেকে নিঃসৃত হলে ধ্বনি বিজ্ঞানের সকল নিয়ম ভেঙে চারদিকে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে। মনে তখন শান্তির ভাব আসে। আবেগের ঘনঘটা দেখা দেয়। কিংবা মন হয় উদ্দীপ্ত, বিদ্রোহী আর অটুট সংকল্পবদ্ধ।  বাঙালি মুসলমান হিসাবে আমাদের কাছে 'জয় বাংলা', 'আসসালামু আলাইকুম ' আর 'আল্লাহ হাফেজ'   এ ধরনের বিশেষ ব্যঞ্জনাময় অভিব্যক্তি। 

একাত্তুরের পবিত্র অভিব্যক্তি ' জয় বাংলা'। 'জয় বাংলা' এক শপথের স্লোগান। মাতৃভূমিকে মুক্ত করার শপথ। মাকে হারতে না দেয়ার শপথ। জুলুমের প্রতিকারের দীপ্ত অংগীকারের শপথ। আর এখন 'জয় বাংলা' মানে দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার মন্ত্র। দেশকে সমৃদ্ধির সাথে সামনে এগিয়ে নেয়ার জপমালা।
সেই 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে অনেকেই এখন পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠে। 'জয়বাংলা' স্লোগানের শেষে বিশ্বজিত, আবরাররা খুন হয়। বক্তৃতার শেষে ' জয় বাংলা'  বলা লোকটি রাতের আঁধারে রিলিফের গম চুরি করে। অপরদিকে অনেক স্বপ্নবাজ মানুষ বিশেষকরে তরুনের দল  'জয় বাংলা' বলে সত্যিকার অর্থে আগে বাড়তে চায়। 'জয় বাংলা' কে আত্মার অভিব্যক্তি বানিয়ে তরুন মুজিব হতে চায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে 'জয় বাংলা' অভিব্যক্তির একটি বর্ণও কিন্তু পালটে যায় নি। তবে অনেকের ক্ষেত্রে পালটে গেছে 'জয় বাংলা' ব্যবহারের উদ্দেশ্য।

এখন আসি 'আসসালামু আলাইকুম' এবং 'আল্লাহ হাফেজ' প্রসংগে। প্রথমে সালাম নিয়ে বলি।সালাম দেওয়ার মত এত নির্দোষ, মহৎ উদ্দেশ্যের অভিব্যক্তি আর নেই বললেই চলে। নবীজির আমল থেকে আজ অবধি আগে সালাম দেয়ার একটা সুন্দর প্রতিযোগিতা মুসলমান সমাজে প্রচলিত আছে। সালাম দেওয়া মানে হল শান্তি কামনা করা। বর্তমানে  সালাম দেয়া নেওয়া ধর্মের দেয়াল টপকে অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক শিষ্টাচারে পরিণত হয়েছে। অন্য ধর্মের অনেক ব্যক্তিও আজকাল সালাম দেয়। প্রফেশনাল ক্ষেত্রে এ রীতিটি বেশ প্রচলিত। দুই ঈদে সালাম দিয়ে আমরা সালামির জন্য বড়দের দিকে তাকিয়ে থাকি। সালামি পেলেই সে সালাম দেয়াটা স্বার্থক হয়। এবার আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। একজন শিক্ষক হিসাবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ/পঞ্চাশ বার ফোনে,  সামাজিক মাধ্যমে লিখে বা সরাসরি সালামের আদান প্রদান করতে হয়। টাইপ করা সালামের আদান প্রদান বেশ কষ্টসাধ্য। তবুও কেউ যদি লিখে সালাম দেয়, তাহলে পুরা উত্তর লিখেই জবাব দেই। 'হাই', 'হ্যালো'  এর জবাব মাঝে মাঝে এড়িয়ে গেলেও সালামের জবাব দেয়ার তাগিদ অনুভব করি। এই সালাম কিন্তু জংগীরাও দেয়। এই সালাম দেয় আওয়ামীলীগ, বি এন পি, জামাত-শিবির থেকে শুরু করে সকল দলের মুসলমান। এই সালাম কি করে একটি দল বা গোষ্ঠীর পরিচয় বহন করে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

আস্তিকদের কাছে 'আল্লাহ হাফেজ' সবচেয়ে দামি তাবিজ। প্রতিবার বিদায়ের আগে স্ত্রী, সন্তান, বা পিতামাতার  ছলচল চোখের দিকে না তাকানোর চেষ্টা করে আমরা 'আল্লাহ হাফেজ' বলে যাত্রা শুরু করি। প্রতিবার ফোন কেটে দেওয়ার আগে আমরা বলি 'আল্লাহ হাফেজ'। 'আল্লাহ হাফেজ' মানে আল্লাহ হেফাজতকারী। এই দুর্ঘটনাময় আর রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাবে জর্জরিত সমাজে আস্তিকদের কাছে 'আল্লাহ হাফেজ' শেষ সম্বল। সেই আল্লাহ হাফেজ যদি কেউ মানুষ মারার পরিকল্পনার মিটিং শেষে বলে, তাহলে আমরা সাধারণ মুসলমানরা কি সেটা বাদ দিব?

ভাষার সঠিক বেঠিক ব্যবহারের জন্য ভাষা দায়ী নয়। দায়ী ভাষা ব্যবহারকারী। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভাষার ব্যবহারের ভালো-মন্দ দিক বিষয়ে উপসংহারে আসতে হবে। সেই ভিত্তিতে ' জয় বাংলা' কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের স্লোগান নয়। এটি স্বাধীনতা প্রিয় বাংগালীর প্রাণের স্লোগান। একইভাবে, জংগী বা মৌলবাদীরা 'আসসালামু আলাইকুম, আর 'আল্লাহ হাফেজ' ব্যবহার করলেও এ দুটি অভিব্যক্তি তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এ অভিব্যক্তিদ্বয়  সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে সাধারণ মুসলমানদের মুখ থেকে নিঃসৃত হওয়া পবিত্র উচ্চারণ।

Related Posts:

  • বাহ! বানান!'গরু' যদি 'গোরু' হয়'তরু' হবে 'তোরু'সরু পথ হয়ে যাবেআরও বেশি 'সোরু'।'গতি' তবে 'গোতি' হবে,'ক্ষতি' হবে 'ক্ষোতি'নেই কাজ তাই বলেএই ভীমরতি! 'কচি' যদি 'কোচি' হয়,'মন' হবে 'মোন';মাথা হবে এলোমেলো, হ্যাং হবে ফোন।'ঈদ' গেল, 'ইদ' এলো,বানানে… Read More
  • HollownessNo matter how smooth the road is, Some people always stumble in doubt. Living in peace they scratch their unhappy skin and invite rout. They aren’t seen doing anything, but are only capable of shout. They are very talkative, … Read More
  • রাক্ষসের ভোজননাটিকাঃ রাক্ষসের ভোজনচরিত্রঃ ১। ইন্সপেক্টর পলক (রাক্ষস রাজের জনৈক পুলিশ ইন্সপেক্টর ২। স্যার ( রাক্ষস রাজের জনৈক সিনিয়র পুলিশ অফিসার।(তাতক্ষনিক রোল প্লে। ভিডিও দেখে স্ক্রিপ্ট লেখা। শেষ পর্যন্ত না দেখলে মজা মিস)স্যারঃ ইন্সপেক্ট… Read More
  • চব্বিশ এবং আরও একটি বিন্দু কাব্যএক : এসো হে বৃষ্টি, এসো এসো এসো হে বৃষ্টি, এসো এসো চার -পাঁচ ঘন্টা ঝরে লোকালয় থেকে সরে পদ্মার জল হয়ে ভেসো। দুই 'বিদায়' শব্দটা বেশি বড় নয়। তবু এর ব্যাপকতা বিষন্ন করে মন, মনের যে শাখায় বাস করে আবেগেরা সেখানে তোলে আলোড়ন। জান… Read More
  • COVID FiTr 20২0Try to unmask happiness with a masked face like mine.Hope for the best that one dayEverything will be fine.Then we'll embrace one anotherAnd the sun will brightly shine.And together we can dineSitting on a table of brotherhoo… Read More

0 comments:

Post a Comment