Wednesday, October 28, 2020

শেয়ার এবং সওয়াব

তোমরা যারা  সুসংবাদের লোভে বা দুঃসংবাদের ভয়ে ধর্মীয় কন্টেন্ট শেয়ার কর, তাদের মেসেজের জবাবঃ
আমি পাঠাবো না। দেখি কি খারাপ খবর আসে। ইসলাম এত সস্তা না। ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিষয় অমান্য করলে ইহকাল বা পরকালে বিপর্যয়গ্রস্ত হতে পারি। তাই বলে ফেসবুকের মত ভার্চুয়াল জগতে নির্দিষ্ট কিছু জিনিস প্রচার করলে  সুখবর পাবো, না প্রচার করলে দুঃসংবাদ পাবো-এই প্রচারণার কোন ইসলামিক ভিত্তি নাই বলে আমি মনে করি। সারাদিন আজেবাজে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার ফাঁকে ফাঁকে  এইসকল ইসলামিক কন্টেন্ট শেয়ার করে ইসলাম কায়েম করা যাবে না বা কোন সুসংবাদ পাওয়া  যাবে না। আল্লাহ তাঁর নিজের মর্জি  মাফিক আমাদেরকে সুসংবাদ বা দুঃসংবাদের। মুখোমুখি করান।  তবে কিছু ভালো কাজের কর্মফল হিসাবে আমরা সুসংবাদ বা ভালো কিছু পেতে পারি। পিতামাতার খেদমত করা, অসহায় বা দুস্থের সাহায্যে এগিয়ে আসা, সর্বোপরি হক্কুল্লাহ এবং হক্কুল ইবাদ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনে ভালো কিছু  পেতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আমি আমার অসুস্থ পিতাকে দেড় মাস একটানা সেবা দেয়ার পর সরকারি চাকুরিতে টিকার সুসংবাদ পেয়েছিলাম। একইভাবে খারাপ কাজের পরিণতি খারাপ হবে। অসহায়, দুস্থ, এতিমদের উপর জোর জুলুম করা, কাউকে তাঁর ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা ইত্যাদি কর্মকান্ডের পরিণতি হিসাবে দুঃসংবাদ বা  দুর্দিনের মুখোমুখি হতে হয়। কাজেই এ ধরনের ধর্মীয় কন্টেন্ট প্রচার করলে পুরস্কার, না করলে শাস্তি- এর কোন ভিত্তি নাই বলে আমি মনে করি। তবে সুসংবাদের লোভ এবং দুঃসংবাদের ভয় না দেখিয়ে এসকল ইসলামিক বা অন্য ধর্মের কন্টেন্ট প্রচার করাকে স্বাগত জানাই।

Friday, October 23, 2020

আপনি সাম্প্রদায়িক

আপনি সাচ্চা মুসলমান,
দেখতে সুন্দর, ব্যবহারটাও অমায়িক।
কিন্তু আপনি সাম্প্রদায়িক!
কি করে বুঝবেন?
কথাগুলো মিলিয়ে নেন।
ভাঙেন নি কোনদিন
পূজার প্রতিমা নিজ হাতে।
কেউ ভাঙলে সাথে সাথে
ফেসবুকে করেছেন প্রতিবাদ,
ঝেড়েছেন স্ট্যাটাস গোটা ছয়।
কিন্তু আপনারও আনন্দ হয়,
মনে গোপন পুলক জাগে,
সারাদিন খামোখাই ভালো লাগে,
কেউ করলে এ কাজ।
আপনি সাম্প্রদায়িক,
সেই সাথে স্টান্টবাজ।
-আল বোরহান

Wednesday, October 21, 2020

ভাষা ভাবনা

কিছু কিছু বাক্য বা শব্দগুচ্ছ ভাষার গন্ডি পেরিয়ে অন্যন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।  এরা মুখ থেকে নিঃসৃত হলে ধ্বনি বিজ্ঞানের সকল নিয়ম ভেঙে চারদিকে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে। মনে তখন শান্তির ভাব আসে। আবেগের ঘনঘটা দেখা দেয়। কিংবা মন হয় উদ্দীপ্ত, বিদ্রোহী আর অটুট সংকল্পবদ্ধ।  বাঙালি মুসলমান হিসাবে আমাদের কাছে 'জয় বাংলা', 'আসসালামু আলাইকুম ' আর 'আল্লাহ হাফেজ'   এ ধরনের বিশেষ ব্যঞ্জনাময় অভিব্যক্তি। 

একাত্তুরের পবিত্র অভিব্যক্তি ' জয় বাংলা'। 'জয় বাংলা' এক শপথের স্লোগান। মাতৃভূমিকে মুক্ত করার শপথ। মাকে হারতে না দেয়ার শপথ। জুলুমের প্রতিকারের দীপ্ত অংগীকারের শপথ। আর এখন 'জয় বাংলা' মানে দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার মন্ত্র। দেশকে সমৃদ্ধির সাথে সামনে এগিয়ে নেয়ার জপমালা।
সেই 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে অনেকেই এখন পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠে। 'জয়বাংলা' স্লোগানের শেষে বিশ্বজিত, আবরাররা খুন হয়। বক্তৃতার শেষে ' জয় বাংলা'  বলা লোকটি রাতের আঁধারে রিলিফের গম চুরি করে। অপরদিকে অনেক স্বপ্নবাজ মানুষ বিশেষকরে তরুনের দল  'জয় বাংলা' বলে সত্যিকার অর্থে আগে বাড়তে চায়। 'জয় বাংলা' কে আত্মার অভিব্যক্তি বানিয়ে তরুন মুজিব হতে চায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে 'জয় বাংলা' অভিব্যক্তির একটি বর্ণও কিন্তু পালটে যায় নি। তবে অনেকের ক্ষেত্রে পালটে গেছে 'জয় বাংলা' ব্যবহারের উদ্দেশ্য।

এখন আসি 'আসসালামু আলাইকুম' এবং 'আল্লাহ হাফেজ' প্রসংগে। প্রথমে সালাম নিয়ে বলি।সালাম দেওয়ার মত এত নির্দোষ, মহৎ উদ্দেশ্যের অভিব্যক্তি আর নেই বললেই চলে। নবীজির আমল থেকে আজ অবধি আগে সালাম দেয়ার একটা সুন্দর প্রতিযোগিতা মুসলমান সমাজে প্রচলিত আছে। সালাম দেওয়া মানে হল শান্তি কামনা করা। বর্তমানে  সালাম দেয়া নেওয়া ধর্মের দেয়াল টপকে অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক শিষ্টাচারে পরিণত হয়েছে। অন্য ধর্মের অনেক ব্যক্তিও আজকাল সালাম দেয়। প্রফেশনাল ক্ষেত্রে এ রীতিটি বেশ প্রচলিত। দুই ঈদে সালাম দিয়ে আমরা সালামির জন্য বড়দের দিকে তাকিয়ে থাকি। সালামি পেলেই সে সালাম দেয়াটা স্বার্থক হয়। এবার আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। একজন শিক্ষক হিসাবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ/পঞ্চাশ বার ফোনে,  সামাজিক মাধ্যমে লিখে বা সরাসরি সালামের আদান প্রদান করতে হয়। টাইপ করা সালামের আদান প্রদান বেশ কষ্টসাধ্য। তবুও কেউ যদি লিখে সালাম দেয়, তাহলে পুরা উত্তর লিখেই জবাব দেই। 'হাই', 'হ্যালো'  এর জবাব মাঝে মাঝে এড়িয়ে গেলেও সালামের জবাব দেয়ার তাগিদ অনুভব করি। এই সালাম কিন্তু জংগীরাও দেয়। এই সালাম দেয় আওয়ামীলীগ, বি এন পি, জামাত-শিবির থেকে শুরু করে সকল দলের মুসলমান। এই সালাম কি করে একটি দল বা গোষ্ঠীর পরিচয় বহন করে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

আস্তিকদের কাছে 'আল্লাহ হাফেজ' সবচেয়ে দামি তাবিজ। প্রতিবার বিদায়ের আগে স্ত্রী, সন্তান, বা পিতামাতার  ছলচল চোখের দিকে না তাকানোর চেষ্টা করে আমরা 'আল্লাহ হাফেজ' বলে যাত্রা শুরু করি। প্রতিবার ফোন কেটে দেওয়ার আগে আমরা বলি 'আল্লাহ হাফেজ'। 'আল্লাহ হাফেজ' মানে আল্লাহ হেফাজতকারী। এই দুর্ঘটনাময় আর রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাবে জর্জরিত সমাজে আস্তিকদের কাছে 'আল্লাহ হাফেজ' শেষ সম্বল। সেই আল্লাহ হাফেজ যদি কেউ মানুষ মারার পরিকল্পনার মিটিং শেষে বলে, তাহলে আমরা সাধারণ মুসলমানরা কি সেটা বাদ দিব?

ভাষার সঠিক বেঠিক ব্যবহারের জন্য ভাষা দায়ী নয়। দায়ী ভাষা ব্যবহারকারী। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভাষার ব্যবহারের ভালো-মন্দ দিক বিষয়ে উপসংহারে আসতে হবে। সেই ভিত্তিতে ' জয় বাংলা' কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের স্লোগান নয়। এটি স্বাধীনতা প্রিয় বাংগালীর প্রাণের স্লোগান। একইভাবে, জংগী বা মৌলবাদীরা 'আসসালামু আলাইকুম, আর 'আল্লাহ হাফেজ' ব্যবহার করলেও এ দুটি অভিব্যক্তি তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এ অভিব্যক্তিদ্বয়  সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে সাধারণ মুসলমানদের মুখ থেকে নিঃসৃত হওয়া পবিত্র উচ্চারণ।

Thursday, October 15, 2020

ঈদ মোবারক
মঙ্গলের বার্তা নিয়ে ঈদ আসুক,
ভাসুক উচ্ছ্বাসে উপলক্ষ প্রিয় প্রাণ,
হাসুক কালকের আকাশ সে উচ্ছ্বাসের রং মেখে। 
টোকাই থেকে টাকাওয়ালা,
লাভ-লসের হিসাব মিলাতে থাকা গরু ব্যবসায়ী,
শেষ সময়ে ঘরের পথে ছুটে চলা যাত্রি,
 বিদেশ বিভুইঁয়ে  ক্রমাগত মন খারাপ হতে থাকা যুবকের  দল,
প্রধানমন্ত্রী আর দুই টাকা বেশি পেয়ে দোয়ারত বৃদ্ধ ভিক্ষুক, 
অস্থির প্রজন্ম আর তাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ সেকেলে মুরব্বি--- সবার ঈদ সুন্দর কাটুক।
ঈদ মোবারক।

Thursday, October 8, 2020

দৃষ্টিভংগি

ছেলেটি আলতো ঠোঁটে একেঁ দিল
মেয়েটির কপালে পবিত্র প্রতিশ্রুতি। 
প্রতিশ্রুতিই তো? নাকি পাপ?
নাকি নষ্ট সমাজের ভ্রষ্ট দু' জন
মানব-মানবীর আদিম উদ্দামতা? 
ঘটনা যাই হোক, আমার দৃষ্টিভঙ্গি
বলে দেয় আমি কি দেখেছি।

অটো পাশ

-স্যার অটো পাশ!!! আমি অটো পাশ!!!!
- অটো কি? অটো তে আছ? না অটো চালাচ্ছ?
_ না, স্যার। এবারের এইচ এস সি পরীক্ষা হবে না। আমরা সবাই অটো পাশ।
- ও, এত খুশি হওয়ার কিছু নাই। এবারের এডমিশন টেস্টে এইচ এসসির রেজাল্ট যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এখন থেকে ভালো করে পড়। না হলে অটো বাঁশ খাবা। ঠিক আছে?
(শিক্ষক বিরক্ত হয়ে ফোন কলটি কেটে দিল। তাঁর বিরক্তির প্রধান কারন মিষ্টি নিয়ে কোন ছাত্রই এবার তাঁর সাথে দেখা করতে আসে নি।)

Monday, October 5, 2020

পুরুষের দল

পুরুষেরা কেউ কেউ ধর্ষক, 
কেউ আবার দর্শক।
বাকি সব
করে রব
যেন পরামর্শক (নারীদের পোশাক, পরিচ্ছদ এবং চলাফেরা বিষয়ে)। 
তুমি বেশ প্রতিবাদী বলবে তো এই?
এ দলের পুরুষ আজ বাংলাতে নেই।

Saturday, October 3, 2020

বিদ্রোহী দেহ

দেহের ভিতর আরেক দেহ জাগে;
শরীরের দূরতম প্রদেশের বিদ্রোহীরাও
সমর্থন জানায় নতুন দেহকে,
বর্জ্যের সাথে নিষ্কাশিত হয় বর্ষীয়ান বিবেক;
বাকি থাকে একরাশ অস্থিরতা।
ফ্যান্টাসি, সমঝোতা কিংবা সার্টিফিকেটে 
মেলে সাময়িক সমাধান। 
তা না হলে খবরের শিরোনাম।
এ কারণেই ‘পুরুষ’ আর ‘পশু’-
দুটি নামের শুরুতেই ‘প’।
তবে ‘প’ দিয়ে ‘প্রেম’ও হয়;
তাতে কি মুক্তি মেলে?